Hot!

কাঁচা কিংবা গুড়ো সব হলুদেই আছে ঔষধি গুণ

কাঁচা কিংবা গুড়ো সব হলুদেই আছে ঔষধি গুণ

গুড়া হলুদ

কাঁচা হলুদ
হলুদ, আমাদের প্রত্যেকের রান্নাঘরে ভীষণ সহজলভ্য একটি উপাদান। হলুদ ব্যতীত বাঙালিদের রান্না যেন কল্পনাই করা যায়না। রান্নায় হলুদ মেশালে স্বাদ বাড়ে। ত্বকে ব্যবহার করলে সৌন্দর্য বেড়ে যায়। বলছি হলুদের কথা। কাঁচা হলুদই হোক আর গুঁড়া হলুদদুটোরই আছে গুণ।



হলুদ কি
হলুদ হচ্ছে আদা গোত্রীয় এক প্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের শিকড় বা মূল।
কাচা হলুদকে কয়েক ঘণ্টা সিদ্ধ করা হয়, তার পর গরম চুলায় শুকানো হয়। শুকনো হলুদকে চূর্ণ করলে গাঢ় হলুদ বর্ণের গুঁড়া পাওয়া যায়, যা আমরা ব্যবহার করে থাকি। আবার শুকনো হলুদ ছিলে নিয়ে পানিতে ভিজিয়েও ব্যবহার করা হয়।

সাম্প্রতিক গবেষেনায় দেখা গেছে হলুদে কারকিউমিননামক একটি বায়ো-এক্টিভ যৌগ আছে, কারকিউমিনের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিবায়োটিক। যা অগ্নাশয়ের(পেনক্রিয়েটিক) ক্যান্সার, আলজাইমার রোগ, কলোরেক্টাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, লিউকমিয়া প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। হলুদ এমন একটি ঔষধী মশলা যা লিভারের বিষক্রিয়া প্রতিহত করায় সবচেয়ে কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। হলুদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
হলুদের সঙ্গে ত্বক ফর্সা হওয়ার একটি বিষয় রয়েছে। কারকিউমিন কেবল হলুদেই পাওয়া যায়। এটিকে জাদুকরি উপাদান বলা হয়। এটি ত্বকের অধিকাংশ সমস্যা সমাধান করতে পারে।
এটি রং ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে, ব্রণ প্রতিরোধ করে, বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধ করে। কারকিউমিন ত্বককে পাতলা করতে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া দূর করে; হোয়াইট হেড, ব্ল্যাক হেড দূর করে। ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
হলুদ ত্বকের বাইরে থেকে মাখলে যে উপকার পাওয়া যায়, খেলেও প্রায় একই রকম উপকার পাওয়া যায় । হলুদ খেলে শরীরের ভেতর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়। ত্বকের জন্যও এটি খুব ভালো। হলুদ খেলে ত্বককে ফর্সা ,সুন্দর ও কোমল করে। ত্বকে নিয়মিত হলুদের ব্যবহার চেহারায় দ্যুতি আনে।




কীভাবে খাবেন
·          এক ইঞ্চি সমান কাঁচা হলুদ দুধের মধ্যে নিয়ে ১৫ মিনিট ফুটাতে হবে। এর পর হলুদটি তুলে ফেলে কেবল দুধ পান করতে হবে। ননিহীন দুধ হলে ভালো হয়।
·       দুই কাপ দুধে আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়া মেশান। এর পর গরম করুন। ঠান্ডা হওয়ার পর পানকরুন।
·           দুধ ঠান্ডা হওয়ার পরই পান করবেন। নয়তো হজমে সমস্যা হতে পারে।
·              আর যাদের হজমে সমস্যা আছে, তাদের খাওয়ার বিষয়ে সাবধান হতে হবে।
·               যদি কোনো সমস্যা না হয়, সব সময় খেতে পারেন।
উপকারিতা-
১। সূর্যের তাপে গা জ্বলে গেলে বা পুড়ে গেলে কাঁচা হলুদ  বাটার মধ্য  দই মিশিয়ে লাগান পোড়া ভাব দূর হয়ে যাবে।
২। হলুদের মধ্যে ফিনোলিক যৌগিক কারকিউমিন রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৩।কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে তা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।হলুদের তৈরি দুধ খেলে তা কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রেখে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

৪। সর্দি-কাশি হলে হলুদ খেতে পারেন। কাশি কমাতে হলে হলুদের টুকরা মুখে রেখে চুষুন। এছাড়া এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুঁড়ো এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন।
৫। বলিরেখা দূর করতে কাঁচা হলুদের সাথে দুধের সর মিশিয়ে মুখে মাখুন ফেস প্যাক হিসাবে। নিয়মিত লাগালে অবশ্যই দারুন উপকার পাবেন।
৬। হলুদ মোটা হওয়া থেকে বাঁচায়। হলুদে কারকিউমিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা শরীরে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায়। শরীরের কলাগুলোকে বাড়তে দেয় না।
৭।  যাদের প্রচুর ব্রণ ওঠে তাদের জন্য কাঁচা হলুদ জাদুর মতো কাজ দেয়। ব্রনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কাঁচা হলুদ বাটা, আঙ্গুরের রস ও গোলাপ জল মিশিয়ে ব্রনের উপরে লাগান। কিছু সময় পর ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ মিলিয়ে যাবে ও ইনফেকশন হবে না।
৮। রোদেপোড়া দাগ কমাতে মসুর ডালবাটা, কাঁচা হলুদবাটা ও মধু একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
৯। আয়ুর্বেদিক মতে, হলুদ রক্ত শুদ্ধ করে। তাই হলুদের ফুলের পেস্ট লাগালে চর্ম রোগ দূর হয়।
১০। গা ব্যথা হলে দুধের মধ্যে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন। জয়েন্টের ব্যথা হলে হলুদের পেস্ট তৈরি করে প্রলেপ দিতে পারেন।
১১। পেটের নানা রকম পীড়ায় যাঁরা ভুগছেন, (যেমন: গ্যাস্ট্রিক, অজীর্ণতা ইত্যাদি) তাঁরা রোজ সকালে খালি পেটে অল্প একটু কাঁচা হলুদের রস কিংবা পাতলা করে কাটা হলুদের ছোট টুকরা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
১২। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় কার্যকরভাবে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে হলুদ ঔষধের মত কাজ করে। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন প্রতিবন্ধকতা কমাতে সাহায্য করে।

১৩ । হলুদে দুধ যেমন ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে পারে ঠিক তেমনি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তবে এই ক্ষেত্রেও লো ফ্যাট দুধ ব্যবহার করুন।
১৪ । গোসলের যাওয়ার আগে কাঁচা হলুদের সাথেনারিকেল তেল অথবা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলে পায়ের ফাটা দাগ কমবেপায়ের ত্বক সুন্দর এবং নরম থাকবে।
১৫। সামান্য হলুদ গুঁড়ার সঙ্গে মাখন মিশিয়ে চোখের নীচে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নিন। এটি চোখের নীচে বলিরেখা সহ কালো দাগও দূর করবে।
১৬। কৃমি সমস্যায় ভুগছেন, প্রতিদিন সকালে কাঁচা হলুদের রস ২০ ফোঁটা নিয়ে তার মধ্যে ১ চিমটি লবণ মিশিয়ে সেবন করুন। চাইলে সামান্য পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। নিয়মিত সেবনে অচিরেই পরিত্রাণ মিলবে।





হলুদ হজমের জন্য খুব উপকারী। খাদ্য হজম হতে যেসব পরিপোষক দরকার, সেগুলো হলুদে নির্দিষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান।
খাদ্যে পরিমাণ অনুযায়ী হলুদের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, এটি খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতেও সহায়ক। তবে অতিরিক্ত হলুদ খাবারে তেতো স্বাদ আনে।
কুসংস্কার প্রচলিত আছে, ‘জন্ডিস রোগে হলুদ একেবারে নিষিদ্ধ’—এই ধারণা ঠিক নয়; বরং জন্ডিসের রোগীর খাবারেও সামান্য পরিমাণ হলেও ব্যবহার করতে হবে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
* লিভারে যাঁদের সমস্যা আছে বা লিভারের রোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী হলুদ খাবেন। বেশি হলুদ খাওয়া তাঁদের জন্য ক্ষতিকর।
* খাবারে কার কতটুকু হলুদ গ্রহণ করা উচিত, তা অবশ্যই চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
* ল্যাক্টোস ইন্টলারেন্ট হলে দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে দুধ বাদ দিয়ে মধু বা শুধু হলুদ অল্প পরিমাণে খেতে হবে। অথবা সয়া দুধও নেওয়া যেতে পারে।
* দুরারোগ্য কোনো লিভারের অসুখ হলে হলুদ যতটা পারা যায় এড়িয়ে চলতে হবে। কী পরিমাণে গ্রহণ করা যাবে, তা জেনে নিতে হবে চিকিৎসকের কাছ থেকে।
* ত্বকে সহ্য না হলে হলুদের ব্যবহার বাদ দিন।
* দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা হলুদ না খেয়ে মাঝেমধ্যে বিরতি দিতে হবে।
* অতিরিক্ত হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। খেতে হবে
পরিমাণ মতো।

0 comments:

Post a Comment