প্রতিদিন একটি করে কলা খাচ্ছেন তো?
১। ওজন হ্রাস
অনেকে মনে করেন কলা ওজন বৃদ্ধি করে। এটি ভুল ধারণা। একটি ছয় ইঞ্চি কলায় ৯০ ক্যালরি থাকে। এটি আঁশযুক্ত খাবার হওয়ায় সহজে হজমযোগ্য। খাবার খাওয়ার আগে একটি কলা খেয়ে ফেলুন। এটি আপনার বেশি খাওয়া প্রতিরোধ করবে।
২। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
উচ্চ রক্তচাপের মূল কারণ সোডিয়ামের অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণ। কলাতে
প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে যা শরীরের
সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। শরীরে
পটাসিয়াম এবং সোডিয়ামে অসামঞ্জস্য দেখা দিলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ইউ ফুড ও ড্রাগ
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কলার এই গুণের কথা মাথায় রেখে স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধে কলার ব্যবহার সুপারিশ
করেছে। , এ ধরনের রোগীদের উচিত দিনে ৩ থেকে
৫টি কলা খাওয়া।
৩। বুক জ্বালাপোড়া দূর
কলা হচ্ছে প্রাকৃতিক
এন্টাসিড ফলে বুক জ্বালাপোড়া দূর করে। নিয়মিত কলা খেলে পাকস্থলীতে ঘা অর্থাৎ আলসার হওয়া প্রতিরোধ করে। কলাতে
প্রোটিয়েজ ইনহিবিটর আছে যা পাকস্থলীর
আলসার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে দূর করে।
৪।
পিএমএস নিয়ন্ত্রণ
কলাতে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৬ আছে যা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যা পিএমএস PMS( Premenstrual syndrome)কমাতে
ইতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। এটি মাসিকের সময়কাল পেট
ব্যথা, বুক ব্যথা দূর করে থাকে। তাই এইসময় নিয়মিত
কলা খাওয়া উচিত।৫। হার্ট সুস্থ রাখে
উচ্চ আঁশযুক্ত কলা হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। University of Leeds in UK এর মতে উচ্চ আঁশযুক্ত কলা হৃদরোগ হওয়া্র ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় একটি কলা রাখুন।
৬। হতাশা/ বিষন্নতা
অবসাদে ভোগা কিছু মানুষের ওপর সার্ভে চালিয়ে দেখা গিয়েছে কলা খেলে ভাল বোধ করেন। কলাতে ট্রিপটোফেন নামক উপাদান আছে যা মানুষের শরীরে সিরোটোনিন হরমোন উৎপন্ন করে। যা আপনাকে রিল্যাক্স করে থাকে।সিরোটোনিন হরমোন আপনার মাঝে খুশির অনুভুতি দিয়ে থাকে। এইজন্য এই সিরোটোনিনকে ‘হ্যাপি হরমোন’ বলা হয়। ভিটামিন বি৬ শরীরে গ্লুকোজের সামঞ্জস্য বজায় রেখে মুড ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
৭। রক্ত স্বল্পতা দূর করা
কলা উচ্চ আয়রন সমৃদ্ধ ফল। কলা রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং তাতক্ষনিক শক্তি বৃদ্ধি করে। রক্ত স্বল্পতা অথবা অ্যানেমিয়া দূর করতে প্রতিদিন একটি কলা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৮। মস্তিষ্ককের উপকারিতা
পটাশিয়ামের
উপস্থিতি মস্তিষ্ককে দ্রুত শিখতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি ভাল করে তোলে।
টানা ১ বছর ধরে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল
ইংল্যান্ডের টুইকেনহ্যাম স্কুলের ২০০ জন ছাত্রের ওপর। পরীক্ষার আগে টানা
ব্রেকফাস্ট, ব্রাঞ্চ ও লাঞ্চে কলা খাওয়ানো হয় তাদের। দেখা গিয়েছিল কলার মধ্যে
থাকা পটাশিয়াম তাদের মনসংযোগ বাড়ানোর ফলে অন্যদের থেকে পরীক্ষায় ভাল করেছিলেন ওই
২০০ জন ছাত্র।
৯। কনসটিপেশন
কলার
মধ্যে প্রচুর পরিমান ফাইবার বা আঁশ থাকায় পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। আবার কাচাকলা খেলে ডায়রিয়া’র সময় উপকার পাওয়া যায়।
১০।মাথা ধরা
সকাল ও দুপুরের মাঝে
সকাল ১০টায় একটা কলা খেতে পারেন। আপনার রক্তে সুগার লেভেল ঠিক রাখবে এবং মাথা ধরা থেমে
যাবে।
১১।মশার কামড়
মশার কামড়ে চামড়া ফুলে
গেলে কোনো ক্রীম ব্যবহার করার আগে পাকা কলার খোসা ডলে দেখুন। জ্বালাপোড়া কমে যাবে।
কলায় থাকে প্রাকৃতিক চিনি – সুক্রোজ, ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজ, আরও থাকে প্রচুর ফাইবার যা শরীরের মধ্যে দ্রুত শক্তি উৎপন্ন করে। দেড় ঘন্টা কষ্টসাধ্য ব্যায়ামের শক্তির জন্য দুটো কলাই যথেষ্ট! এজন্যই পৃথিবীর বড় বড় এথলিটদের কাছে কলাই হলো এক নম্বর ফল!
কলা সম্পর্কে আরও
জানুনঃ
কলা Musaceae
পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এর দুটি 'গণ' আছে যথা: Ensete ও Musa। এ পরিবারে প্রায় ৫০টি 'প্রজাতি' অন্তর্ভুক্ত । Ensete গণের মাত্র ৬-৭টি প্রজাতি
আছে, তবে এর মধ্যে মাত্র
একটি প্রজাতি এ পর্যন্ত ইথিওপিয়ায় জন্মানো সম্ভব হয়েছে। Musa গণের প্রায় ৪০টি প্রজাতি
রয়েছে। এর অধিকাংশ প্রজাতির উৎপত্তি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায়। প্রায় সব আবাদকৃত
কলাই এ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এই গণকে আবার ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশে
কলার প্রায় ১৯টি জাত রয়েছে । পার্বত্য এলাকায় বাংলা কলা, বন কলা, মামা কলা ইত্যাদি নামেও
কলার কিছু বুনো জাত দেখা যায়। ক্রমশ কলার জাতের সংখ্যা বাড়ছে। গাছের বৈশিষ্ট্য
অনুসারে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতের কলা গাছকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা: লম্বা
জাতের গাছ ও খাটো জাতের গাছ। পাকা অবস্থায় খাওয়ার জন্য কলার জাত ৪ প্রকার, যথা:
হলুদবর্ণ পাকা কলা
• সম্পুর্ণ বীজমুক্ত কলা: যেমন-সবরি, অমৃতসাগর, অগ্নিশ্বর, দুধসর, দুধসাগর
প্রভৃতি ।
• দু-একটি বীজযুক্ত কলা: যেমন-চাম্পা, চিনিচাম্পা, কবরী, চন্দন কবরী, জাবকাঠালী
ইত্যাদি ।
• বীজযুক্ত কলা: এটেকলা যেমন-বতুর আইটা, গোমা, সাংগী আইটা
ইত্যাদি ।
• আনাজী কলাসমুহ: যেমন-ভেড়ার ভোগ, চোয়াল পউশ, বর ভাগনে, বেহুলা, মন্দিরা, বিয়েরবাতি প্রভৃতি
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী মালানের মতে ভারতবর্ষ ও চীন কলার জন্মভুমি
। কিন্তু আরেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হিল পাক-ভারত ও মালয়কে কলার উৎপত্তিস্থল বিবেচনা
করেছেন।
প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় যে খাদ্যগুণ আছে তার বিশ্লেষণ
নিম্নরূপ:
পানি---- ৭০.১% প্রোটিন---- ১.২% ফ্যাট/চর্বি---- ০.৩% খনিজ লবণ--- ০.৮%
আঁশ---- ০.৪% শর্করা---- ৭.২%
খনিজ লবণ এবং ভিটামিন
ক্যালসিয়াম----- ৮৫ মি.গ্রা.
ফসফরাস------- ৫০ মি.গ্রা.
আয়রন--------- ০.৬ মি.গ্রা.
ভিটামিন সি…অল্প পরিমাণে
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স----- ৮ মি.গ্রা.
মোট ক্যালরি---------- ১১৬।
আরেকটি কথা। খনার বচনে আছে, "কলা রুয়ে না
কেটো পাত, তাতেই কাপড়, তাতেই
ভাত"।
মদ্যপানের পর Hangover কাটাতে
সাহায্য করে
মদ্যপানের পর হ্যাংওভার কাটাতে কলা সাহায্য করতে পারে। ৬০
গ্রাম কলার খোসা একটি পাত্রে নিয়ে গরম করুন। ২০ মিনিট পর কলার খোসামিশ্রিত গরম
পানি খেয়ে নিন। দেখবেন আস্তে আস্তে হ্যাংওভার কেটে যাবে। অবশ্য পেট ব্যাথা বা ডায়রিয়ায়
আক্রান্তদের কলার খোসামিশ্রিত পানি খাওয়া নিষেধ।
কাচা কলা খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। কারণ, কাচা কলা খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা হতে পারে।
আরেকটি কথা, অনেকে ফ্রিজে
কলা রেখে পরে খান। এটি ঠিক না। ফ্রিজে কলা দ্রুত পচে যায়।
আপেলের সাথে কলার তুলনা
করলে বলতে হয়, এতে আপেলের চাইতে দ্বিগুণ কার্বোহাইড্রেট আছে, তিনগুন ফসফরাস আছে, পাঁচগুণ ভিটামিন এ ও
আয়রন আছে, দ্বিগুণ পরিমাণে অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ আছে। আর আছে
পটাশিয়াম, যা একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। প্রতিদিন খাদ্যাভাসে
কলা রাখুন। আপনার শিশুকেও এই অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন।
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete